Friday, May 20, 2016

সম্ভাবনাময় শিল্প - খরগোশ পালন @ Rabbit Rearing An Emerging Industry



খরগোশ নামটি মনে এলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে লোমশ, তুলতুলে ও চটপটে ছোট একটি প্রাণীর ছবি। খরগোশ বা শশক স্তন্যপায়ী প্রাণীবর্গ Lagomorpha এর Leporidae গোত্রের তৃণভোজী সদস্য। প্রায় ৫২ প্রজাতির খরগোশের মধ্যে নিউজিল্যান্ড (সাদা, লাল, কালো), ডার্ক গ্রে (দেশী), ডাচ, ছিনছিলা, ফ্লোরিডা (সাদা) উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে খরগোশকে সাধারণত পোষা-প্রানী হিসেবে বা শখের বশে পালন করা হলেও বাণিজ্যিকভাবে দ্রুত বর্ধনশীল ও অধিক উৎপাদনশীল খরগোশ পালন বেশ লাভজনক। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য-চাহিদা ও খাদ্য-নিরাপত্তাসাধনের জন্য নতুন নতুন খাদ্য উৎস সন্ধান, সংযোজন ও উৎপাদন প্রয়োজন। ক্ষুদ্র বা বৃহৎ পরিসরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে অল্প পুঁজি ও স্বল্প পরিসরে যে কেউ, যেমন বাড়ির মহিলা বা ছোট ছেলে-মেয়েরাও কাজের ফাঁকে ফাঁকে খরগোশ পালন করে লাভবান হতে পারে। বিশ্বের বহু দেশ (যেমন – ইটালি, ফ্রান্স, চীন, আমেরিকা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া প্রভৃতি) যেখানে খরগোশ পালন, উৎপাদনের মাধ্যমে আমিষের চাহিদা পূরণ করে এবং বাজারজাত করে আর্থিকভাবে প্রচুরভাবে লাভবান হচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে এর বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন একদমই নগণ্য।

খরগোশ পালনের জন্য  যে তথ্যগুলো জানা প্রয়োজনীয়-

খরগোশের শারীরবৃত্তীয় তথ্যসমূহ


  • জীবনকাল ৬-১৩ বছর
  • পানি গ্রহণের পরিমাণ ৫০ – ১০০ মিলি/কেজি/২৪ঘন্টা
  • খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ৯০- ৩০০গ্রাম/২৪ ঘণ্টা
  • তাপমাত্রা ১০৩.৩ – ১০৪০F
  • হৃদ স্পন্দন হার ১৩০ - ১৫০ /মিনিট
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের হার ৩২ -৬০ /মিনিট
  • প্রজনন ক্ষমতা অর্জন ৪-৮ মাস ( জাত ভেদে ৫-৮ মাস)
  • গর্ভাবস্থা নির্ণয় প্রজননের ১০-১২ দিন পর পাল্পেশনের মাধ্যমে
  • গর্ভধারণকাল ৩০-৩২ দিন
  • নবজাতক (প্রতিবারে বাচ্চা প্রদানের) সংখ্যা ২-৮ টি
  • নবজাতকের ওজন ৪০-১০০গ্রাম
  • চোখে দেখা শুরু করে ৭ দিন বয়সে
  • মায়ের দুধ খাওয়া ছাড়ে ৪-৬ সপ্তাহ বয়সে


দেশের সব জায়গায় হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগলের বা ব্রয়লার খামারের মতো খরগোশ পালন করেও লাভ করা সম্ভব। খরগোশ পালন করে মহিলারা বেশি লাভবান হতে পারেন। বাড়ির আশ-পাশ থেকে ঘাস, লতা-পাতা, শাকসবজি, তরকারির ফেলনা অংশ ইত্যাদি সংগ্রহ করে খরগোশ পালন এবং ব্যবসা করা যায়। বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে খরগোশ ছেড়ে পালন করা হলেও বাড়িতে অল্প জায়গায় খাঁচা তৈরি করেই খরগোশ পালন করা যায়। বহুতল বিশিষ্ট খাঁচায় বাণিজ্যিকভাবেও খরগোশ প্রতিপালন করা যায়। 

আমাদের দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা অনুসারে খরগোশ পালনের প্রধান প্রধান সুবিধা গুলো হলঃ


  1.   খরগোশ খুব দ্রুত বর্ধণশীল প্রাণী এবং তাদের খাদ্য দক্ষতা (FCR) অপেক্ষাকৃত ভাল।
  2.   বাড়ির ছাদ বা আঙ্গিনাতে অল্প জায়গাতেই এটি পালন করা যায়।
  3.   খরগোশ তৃণভোজী প্রানী, রান্না ঘরের উৎচ্ছৃস্ট, খড়, ঘাস, আগাছা, শাক-সবজি প্রভৃতি তার স্বাভাবিক খাবার বিধায় খাদ্যর যোগান দেয়া সহজ।
  4.   খরগোশের মাংস নরম, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর, এতে ফ্যাট, কোলেস্টেরল ও সোডিয়ামের পরিমান কম (এমনকি মুরগীর মাংস থেকেও কম) থাকে তাই হার্টের রোগীকেও খাওয়ানো যায়।
  5.   ধর্মীয়ভাবেও যেকোন গোত্রের মানুষের জন্য খরগোশের মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। 
  6.   পবিত্র হাদীস শরীফের ছহীহ্ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে, “হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খরগোশের গোশ্ত হাদিয়া দিলে তিনি তা গ্রহণ করেছেন, খেয়েছেন এবং খেতেও বলেছেন।” এ বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, খরগোশের গোশ্ত খাওয়া কেবল হালালই নয় বরং সুন্নতেরও অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য, খরগোশের পা হরিণ বা গরু-ছাগলের মতো হোক কিংবা বিড়ালের মত হোক উভয় প্রকার পা বিশিষ্ট খরগোশই খাওয়া সম্পূর্ণ হালাল বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে। আর এটা শুধু হানাফী মাযহাবেই নয় বরং হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী, মালেকী প্রত্যেক মাযহাবেই হালাল বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে – (তালীফায়ে রাশিদিয়া-পৃষ্ঠা-৪৫০)।
  7.   একটি প্রাপ্তবয়স্ক মা খরগোশ প্রতিবার ৪-৮ টি বাচ্চা দেয় এবং বছরে ৪-৫ বার বাচ্চা দেয়।
  8.   অন্যান্য পশু-পাখি পালন,পরিবহন ও চিকিৎসার খরচের তুলনায় এদের প্রতিপালন অনেক সহজ। 
  9.   এছাড়া খরগোশের চামড়া ও পশম মূল্যবান, এবং এর পায়খানাও ভালো জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
  10.   পারিবারিক শ্রমেই সফলভাবে খরগোশ পেলে লাভবান হওয়া যায়।



খরগোশ প্রতিপালনের জন্য বাড়ীর আঙ্গিনা বা বারান্দায় অল্প জায়গায় অথবা বাড়ীর ছাদে অল্প বিনিয়োগ করে ছোট আকারের শেড তৈরি করে খরগোশ প্রতিপালন করা যায়।
সাধারনত দুইটি পদ্ধতিতে খরগোশ প্রতিপালন করা যায়- 


1) লিটার পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতিটি কম সংখ্যক খরগোশ পালনের জন্য উপযোগী। মেঝেতে মাটি খুঁড়ে গর্ত বানানো বন্ধ করার জন্য মেঝে কংক্রিটের হওয়া উচিত। মেঝের উপর ৪-৫ ইঞ্চি পুরু করে তুষ, ধানের খড় অথবা কাঠের ছিলকা ইত্যাদি ছড়িয়ে দিতে হবে। এই পদ্ধতিতে এক সাথে ২৫টার বেশি খরগোশ প্রতিপালন করা ঠিক নয়। পুরুষ খরগোশ আলাদা ঘরে রাখা উচিত। অবশ্য এভাবে প্রতিপালন করলে খরগোশ সহজে রোগাক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া খরগোশকে সামলানোও খুব

অসুবিধা হয়।
2) খাঁচা পদ্ধতিঃ বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ প্রতিপালনের জন্য লোহার পাত দিয়ে তৈরি ৩-৪ তাকবিশিষ্ট খাঁচা অধিক উপযোগী। প্রতিটি তাকে খরগোশের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা রেখে খোপ তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্ণবয়স্ক পুরুষ খরগোশের জন্য ৪ বর্গফুট, পূর্ণবয়স্ক মা খরগোশের জন্য ৬ বর্গফুট (প্রসূতি ঘর সহ) এবং বাচ্চা খরগোশের জন্য ১.৫ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন।
আমাদের দেশে সাধারণত পরিবহনযোগ্য নেটের খাঁচা বা কাঠের বাক্স খরগোশ প্রতিপালনের জন্য ব্যবহার করা হয় যা খামারীরা দিনের বেলায় ঘরের বাইরে এবং রাতে ঘরের ভিতরে আনতে পারে। এক্ষেত্রে ঘরের কোনো কোনা এলাকাতে পুরুষ এবং স্ত্রী খরগোশ একত্রে রাখা হয় কিন্তু বাচ্চা দেবার পর বাচ্চাসহ স্ত্রী খরগোশকে আলাদা করে ফেলা হয়। আবার কোনো কোনো এলাকায় স্ত্রী এবং পুরুষ খরগোশকে সবসময় আলাদা রাখা হয়। কেবলমাত্র প্রজননের সময় পুরুষ খরগোশকে স্ত্রী খরগোশের নিকট দেয়া হয়।

খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ
বয়স ও প্রজাতি ভেদে খরগোশের খাদ্য গ্রহণ ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হয়। একটি পুর্ণবয়স্ক খরগোশের খাদ্যে পুষ্টির জন্য ক্রুড প্রোটিন (CP) ১৭-১৮%, আঁশ (Fiber) ১৪%, খনিজ পদার্থ (Minerals) ৭% ও বিপাকীয় শক্তি (Energy) ২৭০০ কিলোক্যালরী/ কেজি হওয়া প্রয়োজন। প্রদেয় খাদ্যে পরিমাণ হিসেবে বয়স্ক খরগোশের জন্য প্রতিদিন ১৫০-২০০ গ্রাম, দুগ্ধবতী খরগোশের জন্য প্রতিদিন ২৫০-৩০০ গ্রাম ও বাড়ন্ত খরগোশের জন্য প্রতিদিন ৯০-১১০ গ্রাম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। 
খাদ্যের ধরণ নির্বাচনে সবুজ শাক-সবজি; যেমন- ঋতু ভিত্তিক সবজি, পালং শাক, গাজর, মুলা, শশা, শাকের উচ্ছিষ্টাংশ, সবুজ ঘাস ইত্যাদি ও দানাদার খাদ্যের ক্ষেত্রে চাল, গম, ভুট্টা, ছোলা, তৈলবীজ ইত্যাদি তবে, বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ পালনের জন্য ব্রয়লার মুরগির জন্য প্রস্তুতকৃত খাদ্য খরগোশের রেশন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

খরগোশকে খাবার খাওয়ানোর নিয়ম-
নতুন খরগোশ কিনলে খরগোশটি কি ধরণের খাবার খায় তা জেনে কেনার আগের ১/২ সপ্তাহ যে ধরণের খাবার খেয়েছে সে ধরণের খাবার দিতে হবে, পরে আস্তে আস্তে অন্য খাবারের অভ্যাস করতে হবে। কম করে কিন্তু বারে বারে, কমপক্ষে দিনে ৩ বার, প্রতিদিন একই সময়ে খাবার দিতে হবে দিতে হবে। 

পরিষ্কার, শুকনা ও তাজা খাবার দিতে হবে। আগের না খাওয়া খাবার সরিয়ে ফেলতে হবে। বিভিন্ন ধরণের খাদ্যে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। হঠাৎ করে খাবার পরিবর্তন করা যাবে না এবং অবশ্যই খরগোশের থাকার আশেপাশে একটি পরিস্কার পাত্রে সবসময় খাবার পানি নিশ্চিত করতে হবে। 


খরগোশের প্রজননঃ
পুরুষ খরগোশ সাধারনত ৮ মাস বয়সে এবং স্ত্রী খরগোশ প্রজাতি ভেদে; ছোট প্রজাতি ৩-৪ মাস এবং বড় প্রজাতি ৮-৯ মাস বয়সে প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে। যদিও খরগোশের গরম হওয়া বোঝা খুব কঠিন। হঠাৎ অস্থিরতা, খাচার সাথে শরীর ডলা, ভালভা ফুলা ও গোলাপী / বেগুনি রং ধারণ করা প্রভৃতি গরম হওয়ার লক্ষণ। প্রজননের সময় একটি পুরুষ খরগোশের সাথে ৩-৪টি স্ত্রী খরগোশ রাখা যেতে পারে তবে গর্ভবতী খরগোশকে পৃথক করে রাখা ভাল। মা খরগোশ সাধারণত গড়ে ৩০ দিন বাচ্চা পেটে রাখে। প্রতিবার বাচ্চা দেওয়ার এক মাসের মাথায় যৌন মিলন ঘটিয়ে বছরে কমপক্ষে ৫ বার বাচ্চা নেওয়া যায়। তবে বছরে ৮ বারের বেশি বাচ্চা নেওয়া উচিত নয়।

স্বাস্থ্য বিধিঃ
খরগোশের দাঁত ক্রমাগতই বাড়ে। তাই শুধুমাত্র এক প্রকার খাবার দিয়ে খরগোশ পালন অসম্ভব। গরমের দরুন খরগোশরা দিনের বেলায় খাবার নেয় না। কিন্তু রাত্রিবেলা ওরা সক্রিয় থাকে। তাই রাত্রিবেলা দেওয়া সবুজ খাবার ওরা নষ্ট না করেই খেয়ে নেয়। খরগোশ শীত সহ্য করতে পারলেও অত্যাধিক গরম সহ্য করতে পারে না। 
প্রজননের জন্য সবচেয়ে বেশি ওজন বিশিষ্ট খরগোশ নির্বাচন করতে হবে। কোন প্রকার অসুস্থ খরগোশকে প্রজনন করানো যাবে না। ১টি পুরুষ খরগোশকে সপ্তাহে ৩/৪ বারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না। বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্য একটি ছোট নেস্ট বক্স অথবা কিছু পরিষ্কার খড়কুটা দিতে হবে। বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্য শান্ত ও পরিছন্ন পরিবেশের দরকার হয়। জন্মের পর কোন মরা বাচ্চা থাকলে তা সরিয়ে নিতে হবে। বাচ্চার গায়ে হাত দিয়ে আদর করা ঠিক না। কারণ এতে বাচ্চার শরীরে অন্য গন্ধ হয় এবং এর ফলে মা বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে পারে। জন্মের পর ১ মাস মায়ের সাথে বাচ্চা রাখতে হবে, ১ মাস পর মা থেকে আলাদা করে কিন্তু পাশাপাশি রেখে আরও ২ মাস পালার পর খাওয়ার উপযুক্ত হয়। 
খরগোশের ঘর, খাঁচা, খাদ্য ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। খাঁচা, নেস্ট বক্স পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে অনেকক্ষণ রোদে রাখতে হবে। পরিষ্কার খাবার ও বিশুদ্ধ পানি দিতে হবে। পিঁপড়া, ইঁদুর, ছুঁচো, শিয়াল ইত্যাদির আক্রমণ থেকে খরগোশকে রক্ষা করতে হবে। রোগাক্রান্ত্র খরগোশকে কখনই AMOXICILLIN জাতীয় ঔষধ দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে প্রানী চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

রোগ বালাইঃ
প্রাণী মাত্রই কিছুনা কিছু রোগ-বালাই আছে তবে অন্যান্য গৃহপালিত পশু-পাখির তুলনায় খরগোশের ক্ষেত্রে রোগ-বালাই কমই হয়। খরগোশ পরিচ্ছন্ন জায়গায় থাকতে বেশী পছন্দ করে। তাই ইহার ঘর সর্বদাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘরে ২৯ সেঃ এর বেশী তাপমাত্রা হলে পুরুষ খরগোশ অনুর্বর হয়ে যায়। এছাড়া খরগোশ কক্সিডিওসিস, গলাফুলা, পাস্তুরেলোসিস, সালমোনেলসিস ও কিছু পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হয়। অসুস্থ খরগোশের চোখ ফ্যাকাসে, কান খাড়া থাকেনা, লোম শুষ্ক ও রুক্ষ দেখায়, খাদ্য ও পানি খেতে অনীহা প্রকাশ করে, দৌড়াদৌড়ি কম করে, নাক/চোখ দিয়ে পানি পড়ে ও শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়। ঘর সর্বদাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে ও নিয়মিত প্রতিষেধক প্রদানের মাধ্যমে প্রায় সকল রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
প্রশিক্ষণঃ
খরগোশ পালনের ক্ষেত্রে প্রথমেই, যারা খরগোশ পালন করে তাদের কাছ থেকে খরগোশ পালনের বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। এছাড়া খরগোশ পালন সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রানীসম্পদ কর্মকর্তা অথবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে পশু পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

কর্মসংস্থান সম্ভাবনাঃ
খুব সহজেই যে কেউ খরগোশ পালনকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন। একটি প্রাপ্তবয়স্ক খরগোশ বছরে ৫ থেকে ৬ বার বাচ্চা দেয়। প্রতিবার এরা ২ থেকে ৮টি বাচ্চা দেয়। এই হিসেবে বছরে একজোড়া খরগোশ থেকে গড়ে ৩২ থেকে ৪০টি খরগোশ হতে পারে। পাশাপাশি ৩ মাস অন্তর অন্তর এরা পূর্ণবয়স্ক হয়ে পুনরায় এদের থেকেই আবার বাচ্চা জন্ম নেয় এজন্যে অবশ্য পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা রাখতে হয়। ছয় মাস বয়সী ১০০টি স্ত্রী খরগোশের সঙ্গে ছয় মাস বয়সী ২৫-৩০টি পুরুষ খরগোশের মিলনের ফলে আড়াই থেকে তিন মাসে গড়ে ৫০০-৬০০টি বাচ্চা পাওয়া সম্ভব। ছয় মাস বয়সী প্রতিটি খরগোশের মূল্য ৩৫০-৫০০ টাকা (বর্তমান বাজার দরে)। প্রতিটি বাচ্চা এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। তখন এদের প্রতিটির মূল্য দাঁড়ায় ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরগুলোতে খরগোশ কেনাবেচা হয়। খরগোশ সবুজ ঘাস, লতাপাতা, শাক-সবজি, ভাত খেতে এরা খুব পছন্দ করে। সামান্য কিছু দানাদার খাবার এবং বাড়ীর আশেপাশের ঘাস, লতা-পাতা এবং ঘরের উচ্ছিষ্টাংশ প্রদান করে পারিবারিকভিত্তিতে ২০ -২৫ টি খরগোশ প্রতিপালন করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের সাথে সাথে মাসিক ৫০০০ - ৬০০০ টাকা আয় করা সম্ভব যা অন্য কোনো ভাবে সম্ভব নয়। এক কাঠা জায়গায় কমপক্ষে ১২০টি খরগোশ পালন সম্ভব। গড় হিসেবে দেখা গেছে আটশো থেকে এক হাজার টাকার একজোড়া ছয়মাস বয়সী বাচ্চা কিনে বছরে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। মাংস হিসেবেও এটি যথেষ্ট চাহিদাসম্পন্ন। বিদেশে এর মাংস ও চামড়া রপ্তানি করেও আয় করা সম্ভব।



No comments:

Post a Comment