Friday, May 20, 2016

গবাদি প্রাণী মোটাতাজাকরণ @ Beef Fattening


বাংলাদেশে মাংস বা গোস্ত ছাড়া বিভিন্ন উৎসব পালন, চিন্তা করাই যেনো অমূলক। কিছুদিন পরই আসছে ঈদ-উল-ফিতর এবং এর পর ঈদ-উল-আযহা। এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের, বিভিন্ন উৎসবের প্রধান উপাদান হল মাংস, সেক্ষেত্রে বিয়ে, মাহফিল, ঈদ তথা কোরবানির মাংসের মূল উৎস হচ্ছে গরু। আর সেটা যদি হয় মোটাতাজা ও সু-স্বাস্থ্যবিশিষ্ট তবে স্বাচ্ছ্যন্দের সীমা থাকে না। এইসব উপলক্ষকে সামনে রেখে যারা গরু মোটাতাজাকরণে আগ্রহী তাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া দরকার। গরু মোটাতাজাকরণ বা বীফ ফ্যাটেনিং (Beef Fattening) বলতে এক বা একাধিক গরু বা বাড়ন্ত বাছুরকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উন্নত সুষম খাবার সরবরাহ করে এবং  বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ঐ গরুর শরীরে অধিক পরিমাণ মাংস/চর্বি বৃদ্ধি করে বাজারজাত করাকেই বুঝায়। বয়সের ওপর ভিত্তি করে সাধারণত ৯০ দিনের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ করা যায় তবে অনেক সময় পরিস্থিতিভেদে ১২০-১৪০ দিনও লাগতে পারে। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক সময় হচ্ছে বর্ষা এবং শরৎকাল যখন প্রচুর পরিমাণ কাঁচা ঘাস পাওয়া যায়। দেশের মাংসের ঘাটতি পূরণ ও বর্ধিত জনসংখ্যার কাজের ব্যবস্থা করতে বাণিজ্যিকভাবে গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ঈদের কিছুদিন আগ থেকে গরুকে উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা দিয়ে মোটাতাজাকরণ লাভজনক। এজন্য দরকার গরু মোটাতাজাকরণে সঠিক ব্যবস্থাপনা। তাই এটি কখন ও কিভাবে করলে বেশি লাভবান হওয়া যায় তার আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক  পদ্ধতি নিম্নে আলোচনা করা হলো-

গরু মোটাতাজাকরণের সুবিধাসমূহঃ

  • স্বল্প টাকা বিনিয়োগ করে অল্প সময়ে লাভসহ মূলধন ফেরত পাওয়া যায়।
  • দেশী এবং শংকর দুই জাতের গরুই মোটাতাজাকরণে ব্যবহার করা যায়।
  • গরুর খামার তৈরির জন্য খুব বেশি শ্রমিক এবং দক্ষ অভিজ্ঞ শ্রমিকেরও প্রয়োজন হয় না।
  • এ ধরণের খামারের জন্য বেশি জমিরও প্রয়োজন হয় না।
  • স্বল্পমেয়াদি প্রকল্প হওয়ার কারণে পশু মৃত্যুর হার কম।
  • বেকার যুবকদের ও মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।
  • কৃষিকার্য থেকে উৎপাদিত উপজাত, খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে সহজেই অধিক মাংস উৎপাদন করা যায়।


মোটাজাতকরণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয়সমুহঃ

ক. গরু নির্বাচনঃ
বিশুদ্ধ জাতের গরু অপেক্ষা সংকর (CROSS) জাতের গরুর শারীরিক বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি হয় বলে সংকর জাতের গরু নির্বাচন করা ভালো। তবে দেশীয় গরু মোটাতাজাকরণও লাভজনক।
দুই-আড়াই (২-২.৫) বছরের গরুর শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠন মোটাতাজাকরণের জন্য বেশি ভালো।
এঁড়ে বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধির হার বকনা বাছুরের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
বাছুরের শিরদাঁড়া সোজা, বুক চওড়া ও ভরাট, পেট চ্যাপ্টা ও বুকের সঙ্গে সমান্তরাল, মাথা ছোট ও কপাল প্রশস্ত, চোখ ভেজা ও উজ্জ্বল, পা খাটো প্রকৃতির ও হাড়ের জোড়াগুলো স্ফীত, পাঁজর প্রশস্ত ও বিস্তৃত হতে হবে।
কালো ও গাঢ় লাল রঙের গরু বাছাই করতে হবে। এতে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যাবে।
ঢিলে চামড়া বিশিষ্ট, পাতলা অথচ সুস্থ রোগহীন গরু বাছাই করতে হবে।
তবে...কেনার পর গরুর শরীরে কোনো ক্ষত থাকলে সে স্থানে পভিসেপ বা স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে তা না শুকানো পর্যন্ত নেগোভোন মলম লাগিয়ে প্রয়োজনে ব্যাণ্ডেজ করে রাখতে হবে, যাতে ক্ষত স্থানে মশা-মাছি কিংবা ময়লা জমতে না পারে। ক্ষত সেরে যাওয়ার পর গরুর গায়ের সেসব পরজীবী যেমন-উকুন, আঠালি, সিঁদুর পোকা ইত্যাদি মুক্ত করতে হবে।

খ. স্থান নির্বাচনঃ
গরুর আবাসস্থল স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হচ্ছে- শুষ্ক ও উঁচু জায়গা হতে হবে, যাতে খামার প্রাঙ্গণে পানি না জমে থাকে; খোলামেলা ও প্রচুর আলো-বাতাসের সুযোগ থাকতে হবে। ঘরের মেঝে ইট বিছানো বা পাকা হতে পারে তবে মসৃণ করা যাবে না। কাঁচা মেঝেতেও গরু পালন করা যায়। ঘরের মেঝের একদিকে ঢালু করতে হবে যাতে গোবর ও মুত্র ড্রেন দিয়ে দূরে গর্তে ফেলা যায়। খামারে কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদিত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের জন্য যোগাযোগ সুবিধা থাকতে হবে। পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকতে হবে। সুষ্ঠু নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে, যেমন- পানি, মলমূত্র, আবর্জনা ইত্যাদি। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে সম্প্রসারণের সুযোগ থাকতে হবে।

গ. বাসস্থানের গঠনঃ
 গরুর বাসস্থান তৈরির জন্য খোলামেলা উঁচু জায়গায় ঘর তৈরি করা প্রয়োজন। একটি গরুর জন্য মাপ হতে হবে কমপক্ষে ১০-১২ বর্গফুট। মাঝারী আকারের গরুর জন্য ৫-৬ ফুট দৈর্ঘ্য X ৩-৪ ফুট প্রস্থ ও ঘরের উচ্চতা ৮-১০ ফুট হওয়া দরকার। ভিটায় ১ ফুট মাটি উঁচু করে এর ওপর ১ ফুট বালু দিয়ে ইট বিছিয়ে মেঝে মসৃণ করার জন্য সিমেন্ট, বালু ও ইটের গুঁড়া দিতে হবে। গরুর সামনের দিকে চাড়ি এবং পেছনের দিকে বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য নালা তৈরি করতে হবে। বাঁশের খুঁটি দিয়ে বেঁধে ওপরে ধারি অথবা খড় ও পলিথিন দিয়ে চালা দিতে হবে, ঘরের পাশে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা দরকার। পাশাপাশি দাঁড়ানো গরুকে বাঁশ দিয়ে আলাদা করতে হবে যাতে একে অন্যকে গুঁতা মারতে না পারে। ঘরের চারপাশ চটের পর্দার ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে অতি বৃষ্টি ও অতি ঠান্ডার সময় ব্যবহার করা যায়।

ঘ. খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ
জীবন ধারনের জন্য খাদ্য অত্যাবশ্যক। গরু মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে খাদ্যে মোট খরচের প্রায় ৬০-৭০ ভাগ ব্যয় হয়। তাই স্থানীয়ভাবে খরচ কমানো সম্ভব। এজন্য গরু মোটাতাজাকরণের একটি সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিচে দেয়া হলো-
শুকনা খড়ঃ দুই বছরের গরুর জন্য দৈহিক ওজনের শতকরা ৩ ভাগ এবং ২ এর অধিক বয়সের গরুর জন্য শতকরা ২ ভাগ শুকনা খড় ২-৩ ইঞ্চি করে কেটে এক রাত লালীগুড়/চিটাগুড় মিশ্রিত পানিতে (পানি : চিটাগুড়=২০:১ ) ভিজিয়ে প্রতিদিন সরবরাহ করতে হবে।
কাঁচা ঘাসঃ প্রতিদিন ৬-৮ কেজি তাজা ঘাস বা শস্য জাতীয় তাজা উদ্ভিদের উপজাত দ্রব্য যেমন- নেপিয়ার, জার্মান,পারা, খেসারি, দেশজ মাটি কলাই, দুর্বা ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে।
দানাদার খাদ্যঃ   প্রতিটি গরুকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১-২ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। নিচে ১ কেজি দানাদার খাদ্যের তালিকার একটি নমুনা দেয়া হলো-
উপাদান দানাদার খাদ্য মিশ্রণের পরিমাণ শতকরা হার
গম ভাঙা-গমের ভুসি ৪০০ গ্রাম ৪০%
চালের কুড়া ২০০ গ্রাম ২০%
তিলের খৈল ১৫০ গ্রাম ১৫%
খেসারি বা ছোলা অথবা যে কোনো ডালের ভুসি ১৫০ গ্রাম ১৫%
হাড়ের গুড়া/ঝিনুক গুড়া ৫০ গ্রাম ৫%
লবণ ৫০ গ্রাম ৫%
মোট ১০০০ গ্রাম =১ কেজি ১০০%
উল্লিখিত তালিকা ছাড়াও বাজারে প্রাপ্ত ভিটামিন মিনারেল মিশ্রণ (যেমন- Ranmix Total®), এন্টিবায়োটিক (যেমন- Oxysentin® ২০% @ ১গ্রাম/কেজি) ও বাজারে প্রচলিত খাবার সোডা, ১% হারে খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন রকমের ইউরিয়া মোলাসেস ব্লকও ব্যবহার করা যেতে পারে।

গরুকে সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে মিশ্রিত উন্নত খাবার দিতে হবে-
১। আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় জাতীয়-খাদ্যের সাথে মিশিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে
২। দানাদার জাতীয়-খাদ্যের সাথে সরাসরিভাবে এবং
৩। ইউরিয়া মোলাসেস ব্লকের মাধ্যমে ।

খড়ের সাথে মিশিয়ে ইউরিয়া খাওয়ানোর নিয়মঃ ১০ কেজি খড় (ইউ.এম.এস.) প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ৫ লিটার পানি, চিড়াগুড় ২.৫ কেজি  এবং ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া পলিথিনের উপর বা পাকা মেঝের উপর স্তরে-স্তরে সাজিয়ে ভালভাবে  উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে সমস্ত উপাদান মেশাতে হবে, যা একবারে বা সংরক্ষণ করে ২-৩ দিনের মাঝে খাইয়ে শেষ করতে হবে। গরুকে প্রথমে দৈনিক ৫ গ্রাম থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০-৬০ গ্রাম ইউরিয়া খাওয়ানো যায়। ছোট গরুর ক্ষেত্রে ৩০-৪০ গ্রামের বেশী দৈনিক খাওয়ানো উচিত নয়। দানাদার খাদ্যে ইউরিয়া ব্যবহার করে ১০০ কেজি দৈহিক  ওজনের গবাদি পশুর দৈনিক খাদ্যের তালিকা নিন্মরুপ-

  • ধানের খড় = ২ কেজি
  • সবুজ ঘাস = ২ কেজি (ঘাস না থাকলে খড় ব্যবহার করতে হবে )
  • দানদার খাদ্যে মিশ্রন = ১ - ২ কেজি
  • ইউরিয়া = ৩৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
  • চিটাগুড়া = ২০০-৪০০ গ্রাম
  • লবণ = ২৫ গ্রাম

দানাদার খাদ্যের সাথে লবন, ইউরিয়া, চিটাগুড় এক সাথে মিশিয়ে দিনে ২ বার দিতে হবে। ধানের খড় এবং কাঁচা ঘাস ছোট ছোট করে কেটে এক সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
খাওয়ানের পরিমানঃ  প্রতিটি গরুকে তার দেহের ওজন অনুপাতে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। গরুর ওজনের শতকরা ২-৩ ভাগ পরিমাণ খাবার (Dry Matter) সরবরাহ করলেই চলবে।
খাওয়ানোর সময়ঃ গরুকে দানাদার মিশ্রণটি এবারের না খাইয়ে ২ ভাগে ভাগ করে সকালে এবং বিকালে খাওয়াতে হবে।

পানিঃ প্রতিটি গরুকে পর্যান্ত পরিমানে পরিস্কার খাবার পানি সরবরাহ করতে হবে।
এছাড়াও মোটাতাজা করনের গরুকে সর্বক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশ জাতীয় খাবার (খড়, কাঁচা ঘাস) এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। গবাদীপশুকে ইউরিয়া প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রদানে কিছু কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।

  • এক বছরের নিচে গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।
  • কখনও মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না
  • অসুস্থ গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না, তবে দূর্বল গরুকে পরিমাণের চেয়ে কম খাওয়ানো যেতে পারে।
  • ইউরিয়া খাওয়ানোর প্রাথমিক অবস্থা (৭ দিন পর্যন্ত পশুকে ঠান্ডা ছায়াযুক্ত স্থানে বেঁধে রাখতে হবে এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। প্রকল্প মেয়াদ তিন মাস, শুরু হবে ইউরিয়া মিশ্রিত খাবার প্রদানের দিন থেকে।


এই খাবার খাওয়ানো শুরুর ১০-১৫ দিন পর ইনজেকশন Catophos® বা Catopen®  (১৫-২০ মিলি করে) মাংসপেশীতে প্রতি ১৪ দিন পরপর প্রয়োগ করলে মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
উল্লেখিত তিনটি পদ্ধতির মধ্যে খড়ের প্রক্রিয়াজাত করে ইউরিয়া খাওয়ানো সহজ, ব্যয় কম এবং ফল ভালো আসে। এই প্রকল্পগুলো বিভিন্ন বয়সী হতে পারে। যেমন ৩ বা ৪ মাস মেয়াদি। নির্ভর করছে খামারি কেনা গরুটি কি রকম মোটা করে কি দামে বিক্রি করবেন। দাম বেশি চাইলে প্রকল্প মেয়াদ দীর্ঘ হবে এবং কম চাইলে প্রকল্প মেয়াদ স্বল্প হবে। তবে অনেকেই ঈদের বাজারকে চিন্তা করে তার ৪/৫ মাস আগে থেকে প্রকল্প শুরু করেন।

ঙ. অন্যান্য প্র্যয়োজনীয় তথ্যাবলীঃ
গরু কেনার পরপরই, একটি গরুর জন্য Negopox® পাউডার প্রতি কেজি পানিতে ১/২ চা চামচ মিশাতে হবে। তারপর বসতি থেকে কিছুটা দূরে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে প্রথমে ভালোভাবে নিজের নাক-মুখ বেঁধে, গরুর কান, চোখ, মুখ ছাড়া লেজের গোড়া, শরীরের সঙ্গে পায়ের সংযোগস্থলসহ সকল সংকীর্ণ জায়গায় এবং গোয়ালের সর্বত্র ওষুধ মিশ্রিত পানি দিয়ে ভিজিয়ে বা লাগাতে হবে। ওধুষ লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করার পরে পরিস্কার পানি দ্বারা শরীরের সর্বত্র ভালোভাবে ধুয়ে ওষুধমুক্ত করতে হবে। ওষুধ লাগানোর ২/১ দিন পর যদি দেখা যায় ভালোভাবে বাহ্যিক পরজীবী মুক্ত হয়নি তবে ১৫ দিন পরে আবার একই নিয়মে ওষুধ লাগাতে হবে।
সর্তকতা-

  • যে ব্যক্তি ঔষুধ লাগাবেন, তিনি গরুর শরীরের ক্ষতস্থান সম্পর্কে সচেতন থাকবেন, কারণ এই ঔষুধ বিষ জাতীয়।
  • গরুর শরীরে ক্ষতস্থানকে (যদি ভালোভাবে না শুকিয়ে থাকে) এড়িয়ে ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
  • গরুকে ঔষুধ প্রয়োগের পর ভালোভাবে গোসল করিয়ে উক্ত স্থান থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে মুখের বাঁধন খুলতে হবে কারণ গরু স্বভাবত ঔষুধ লাগা ঘাস বা পানি খেয়ে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।


কৃমিমুক্তকরন  : পশু ডাক্তারের নির্দেশনা মত কৃমির ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। গরু সংগ্রহের পর পরই পালের সব গরুকে একসাথে কৃমিমুক্ত (বিশেষ করে গোল কৃমি ও কলিজা বা পাতা কৃমি) করা উচিত। তবে প্রতি ৭০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ টি করে ENDEX® বা LT-Vet® টাবলেট অথবা প্রতি ১২০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ টি Tetranid®  ব্যবহার  করা যেতে পারে।
টিকা প্রদান : পূর্ব থেকে টিকা না দেওয়া থাকলে খামারে আনার পরপরই সবগুলো গরুকে তড়কা, বাদলা এবং ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হবে। এ ব্যপারে নিকটস্থ পশু হাসপাতলে যোগাযোগ করতে হবে।

রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা : কেনার পর গরুকে ৭ দিন আলাদা রাখতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পশুর গোসল করাতে হবে। গোশালা ও পার্শ্ববর্তী স্থান সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে। নিয়মিতভাবে গরুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। বাসস্থান সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিমিত পরিমাণে পানি ও সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে। রোগাক্রান্ত পশুকে অবশ্যই পৃথক করে রাখতে হবে। খাবার পাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। খামারের সার্বিক জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে। পশু জটিল রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কোনোভাবেই কোনো গ্রোথ হরমোন (Dexamethasone জাতীয় ঔষধ) ব্যবহার করে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের উদ্যোগ নেওয়া যাবে না। এসব ঔষধের ব্যবহার ছাড়াও স্বাভাবিক ও জৈব পদ্ধতিতেই গরু মোটাতাজাকরণ সম্ভব। এজন্য দরকার শুধু কিছু নিয়মকানুন মেনে চলা।
বাজারজাতকরণ : মোটাতাজাকরণ গরু লাভজনকভাবে সঠিক সময়ে ভালো মূল্যে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে আরেকটি উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়। বাংলাদেশে মাংসের জন্য বিক্রয়যোগ্য গবাদিপশুর বাজার মূল্যেও মৌসুমভিত্তিক হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। কাজেই একজন প্রতিপালককে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য অবশ্যই গরুর ক্রয় মূল্য যখন কম থাকে তখন গরু ক্রয় করে বিক্রয় মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে বিক্রয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণত কোরবানির ঈদের সময় গরুর মূল্য অত্যধিক থাকে এবং এর পরের মাসেই বাজার দর হ্রাস পায়। তাই এখন গরু মোটাতাজাকরণের উপযুক্ত সময়। তবে গরু বিক্রির কমপক্ষে ২ সপ্তাহ আগে থেকে সব ধরনের ভিটামিন ও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। স্বল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ার সহজ এবং সুবিধাজনক উপায়ের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ একটি অত্যন্ত যুগোপযোগী পদ্ধতি। তাছাড়া বর্তমানে সারাবছরই মাংসের বাজার দর স্থিতিশীল থাকায় গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসার সাথে জড়িত থাকলে লাভবান হওয়া যায়। স্থানীয় হাট-বাজার ও শহরে গরুর মাংসের চাহিদা খুব বেশি।


দৈহিক ওজন নির্ণয়ঃ মোটাতাজাকরন প্রক্রিয়ায় গরুকে দৈহিক ওজন নির্ণয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা গরুর খাদ্য সরবরাহ,ঔষধ সরবরাহ ইত্যাদি কাজগুলো করতে হয় দৈহিক ওজনের ভিত্তিতে। গরুর ওজন নির্নয়ের জন্য গরুকে সমান্তরাল জায়গায় দাড় করাতে হবে এবং ছবির নির্দেশিকা মোতাবেক ফিতা দ্বারা দৈর্ঘ্য (L) ও বুকের বেড়ের (G) মাপ ইঞ্চিতে নিতে হবে। এই মাপ   (L ×G^2)/৬৬০=ওজন (কেজি) সূত্রে বসালে গরুর ওজন পাওয়া যাবে


প্রশিক্ষণঃ গরু মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে এ পদ্ধতির বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। এছাড়া গরু মোটাতাজাকরণ সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অথবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে পশু পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

Compiled by: Dr. Md. Kumrul Hassan 

No comments:

Post a Comment